বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০২:৫১ পূর্বাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টারঃ গাইবান্ধা জেলার জনসংখ্যা ২৫ লাখ ৬২ হাজার ২৩২ জন। বিপুল এ জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের জন্য তেমন কোনো ভারী শিল্পও গড়ে ওঠেনি। যমুনা, তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্রবেষ্টিত এ জেলার মানুষের প্রধান পেশা কৃষিকাজ। যদিও বছরে পাঁচ-ছয় মাস কর্মে নিয়োজিত থাকতে পারেন শ্রমজীবীরা। কাজ না থাকায় বাকি সময়টায় পড়তে হয় আর্থিক সংকটে। বিশেষ করে আশ্বিন ও কার্তিক মাসে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন কর্মহীন মানুষ। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন অধিকাংশ শ্রমজীবী নারী ও পুরুষ।
কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের তথ্য বলছে, গত পাঁচ বছরে বিদেশ গেছেন ২৮ হাজার ২৫৭ জন। এর মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ২৫ হাজার ৯১১ ও নারী ২ হাজার ৩৪৬ জন। বিষয়টিকে সংশ্লিষ্টরা ইতিবাচক হিসেবে দেখলেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি কৃষি। অথচ এ খাতেই পর্যাপ্ত শ্রমিকের অভাব রয়েছে। দেশে প্রত্যাশিত কর্মসংস্থান না থাকায় শ্রমজীবীরা বিদেশমুখী হচ্ছেন। এতে কৃষি শ্রমিক সংকট প্রকট আকার ধারণ করছে। যার স্পষ্ট প্রভাব লক্ষ করা যায় ধান কাটা ও মাড়াইয়ের সময়। এছাড়া চাকরির সিংহভাগই হয় বেসরকারি খাতে। তবে দেশে ভালো কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বড় ধরনের ব্যর্থতা রয়েছে। তাই শিক্ষিত ও অল্প শিক্ষিত মানুষের মধ্যে এক ধরনের হতাশা কাজ করছে। অনেকে নিরুপায় হয়ে বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কেউ কেউ জমি বিক্রি ও ঋণ করেও বিভিন্ন দেশে যাচ্ছেন। তবে বিদেশের মাটিতে পরিশ্রমের তুলনায় ন্যায্য মজুরি না পাওয়ার অভিযোগও রয়েছে। সাঘাটা উপজেলার চিনিরপটল গ্রামের আপেল মিয়া। কৃষি শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন তিনি। শ্রম বিক্রি করেই চলে তার সাংসারিক ব্যয়। তবে আশ্বিন-কার্তিকে এ অঞ্চলের কৃষি খাতে তেমন কাজ না থাকায় বেকার সময় পার করতে হয়। সময়টা তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদীর চরে মরিচ, ভুট্টা, বেগুন, বাদামসহ বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষাবাদ হয়। আর্থিক সংকট সাময়িক মোকাবেলার জন্য সেখানে শ্রম বিক্রি করছেন তিনি।
সাঘাটা উপজেলার মথরপাড়া গ্রামের শাহজাহান আলী জানান, এলাকায় বছরে পাঁচ-ছয় মাস কাজ থাকে। বাকি সময় বেকার থাকতে হয়। তবে আশ্বিন-কার্তিক পার করা কঠিন হয়ে পড়ে।
সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে বিদেশে চলে যাচ্ছেন শ্রমজীবীরা। পুরুষের পাশাপাশি বেড়েছে নারী প্রবাসীর সংখ্যাও। গাইবান্ধা জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালে বিদেশে গেছেন ৭৫৯ জন শ্রমজীবী পুরুষ। এ সময় বিদেশ যাওয়া নারীর সংখ্যা ছিল ১৪৩। পরের বছর অর্থাৎ ২০২১ সালে ২ হাজার ১৭২ জন পুরুষ ও ৪১৩ জন নারী, ২০২২ সালে ৪ হাজার ৭৪৯ জন পুরুষ ও ৫৪৭ জন নারী শ্রমিক বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। ২০২৩ সালে পুরুষ শ্রমিকের বিদেশ যাওয়ার হার আগের বছরের তুলনায় বাড়লেও কিছুটা কম ছিল নারী শ্রমিকের হার। ওই বছর বিদেশ গেছেন ৯ হাজার ৬৪৫ জন পুরুষ ও ৫৪১ জন নারী। সর্বশেষ ২০২৪ সালের হিসাব অনুযায়ী, ৮ হাজার ৫৮৬ জন পুরুষ ও ৭১১ জন নারী কর্মসংস্থানের সন্ধানে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন।
সার্বিক বিষয়ে গাইবান্ধা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের সহকারী পরিচালক মোঃ নেশারুল হক বলেন, বৈধভাবে বিদেশ যেতে আগ্রহী করতে আমরা সরকারি ও বেসরকারি প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছি। যাতে কেউ দালালের খপ্পরে পড়ে প্রতারিত না হয়। নারীদের ক্ষেত্রে এখন নিরাপদ কাজের ব্যবস্থা রয়েছে। যারা বিদেশ যেতে ইচ্ছুক, তারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছি। প্রশিক্ষণ নিয়ে সহজেই তারা বিদেশ যেতে পারবে।